বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২০

শুরু হয়েছে রোবট যুগ


রোবট যুগ শুরু হয়েছে। আর সেক্ষেত্রে বিপ্লবটি হবে  ‘রোবটিক বিপ্লব।’ তবে গবেষকরা মনে করছেন, সাধারণের ধারণামতো রোবটিক বিপ্লব হবে না। এক্ষেত্রে বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন হবে। সাধারণত আমরা রোবট বিষয়ে যেমনটা ধারণা করি যে, মানুষ কিংবা বড় খেলনার আকৃতির রোবট, বাস্তবতা তেমন হবে না। এক্ষেত্রে রোবট বলতে কোন আকৃতির যন্ত্রমানব দিয়ে যে পৃথিবী ছেয়ে যাবে, এমনটা মানতে নারাজ বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন হবে। এক্ষেত্রে প্লাস্টিকের পুতুলের মতো রোবট যে আপনার চারপাশে ঘুরঘুর করবে, এমনটা মনে করছেন না বিশ্লেষকরা। তবে আপনার চারপাশে অসংখ্য স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি কাজ করবে, যেগুলোর কার্যক্ষমতা আপনার জীবনকে সহজ করে দেবে। এসব উন্নত বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রপাতিকেই রোবট বলছেন তারা।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বিষয়টিকে অনেকে সংজ্ঞায়িত করতে চাইছেন। এটি অনেকটা বুদ্ধিমান যন্ত্রপাতির মাঝে বাস করার মতো। অসংখ্য বুদ্ধিমান ও স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতির একটি জোয়ার আসতে যাচ্ছে শীঘ্রই। আর এ জোয়ারে গা ভাসানোর জন্য এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্বের সব বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সাধ্যমতো স্মার্ট ডিভাইস তৈরিতে মনোযোগী হয়েছে। তারা চাইছে যেভাবে সম্ভব এ রোবট যুগে নিজেদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা মেলে ধরতে। প্রযুক্তি বিশ্বের বর্তমান ধারায় দেখা যায়, প্রতি ১০ থেকে ১৫ বছর পর পর একটি নতুন ধারা যুক্ত হচ্ছে। এ ধারায় ছিল পিসি বা পার্সোনাল কম্পিউটারের বিপ্লব, ইন্টারনেট বিপ্লব ও মোবাইল ফোন বিপ্লব। এবার সে সব বিপ্লবকে পেছনে ফেলে নতুন বিপ্লবের সময় এসেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে রোবট সোফিয়াকে ঘিরে তৈরী হয়েছে বিশেষ আগ্রহ-উদ্দীপনা। গত ৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ডিজিটাল মেলায় রোবট সোফিয়াকে উপস্থাপন করা হয়। এর পেছনে খরচ হয়েছে ১৬ কোটি টাকা। এনেিয় সমালোচনার ঝড় উঠলেও দল বেধে হাজার হাজার প্রযুক্তিপ্রেমী সোফিয়ার সঙ্গ পাওয়ার আসায় ভিড় জমান ডিজিটাল মেলায়। স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেকেই সোফিয়াকে চাক্ষুষ দেখতে পারেনি। ফলে কিছুটা অপ্রীতিকর অবস্থা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু যারা রোবটটির কথা কাছ থেকে শুনতে পেরিছিলেন তারা যারপরনাই খুশি হয়েছেন। কেননা, তারা এই ধরণের রোবট এর আগে দেখার সুযোগ পাননি। রোবট সোফিয়ার সঙ্গে ছিলেন তার উদ্ভাবক ডেভিড হ্যানসনও। রোবটটি বাংলাদেশের জামদানির প্রশংসা করে। এছাড়াও সে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আগ্রগতির কথাও সমাগত সামনে উপস্থাপন করে। ডেভিড হ্যানসন বলেন ‘আপনারা চাইলে সোফিয়ার মতো সটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। সোফিয়ার মতো রোবটও বানাতে পারেন।’ ডেভিড বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই রোবট বানানোর স্বপ্ন দেখতাম। আমি ৩০ বছর আগে প্রথম রোবট বানিয়েছিলাম। আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ও সাধনার ফল সোফিয়া।’
সত্যজিৎ এর ছোট গল্প অনুকূল লেখা হয়েছিল অনেক বছর আগে। তখনই কলকাতার এক লোক একটি প্রাইভেট এজেন্সি থেকে তার ঘরের কাজ করার জন্য এনেছিলেন কাজ করার রোবট। তারপর কত কিছু ঘটল সেই অনুকূলকে নিয়ে। কলকাতায় এই গল্পটিকে ছায়া হিসেবে নিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি শল্পদৈর্ঘ্য ছবি। কিন্তু তখন খুব অবাক হলেও এখনকার জীবনে রোবটের এই বিপ্লবটা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে পড়ছে। বরং অনেকে অপেক্ষা করে তাকিয়ে থাকে খবরের পাতার দিকে আর কোন খবর আসবে কিনা। বর্তমানে যেসব প্রযুক্তির উন্নয়ন হলেই রোবট বিপ্লব হবে তার একটি তালিকা করছেন গবেষকরা। এতে দেখা যায় কয়েকটি প্রযুক্তির কাজ অনেকদূর এগিয়ে গেছে। এ প্রযুক্তিগুলো সহজলভ্য হলেই তা নতুন বিপ্লবের দ্বার উন্মুক্ত করবে। এ ছাড়া রয়েছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও মানুষের প্রস্তুতি। এক দৃষ্টিতে রোবট বিপ্লব কাছে আনার লক্ষণগুলো হলো নিম্নরূপ।
হার্ডওয়্যার: নানা ধরনের সেন্সর ও অন্য সংবেদনশীল যন্ত্রপাতিগুলো সহজলভ্য হয়ে উঠছে। মোবাইল ফোনের সেন্সরগুলোই পরবর্তীতে রোবট বিপ্লবে কাজে লাগবে। এ ছাড়া রয়েছে ব্লুটুথ, উচ্চগতির ওয়াইফাই, কম্পিউটার চিফ ইত্যাদির সহজলভ্যতা।
সফটওয়্যার: প্রত্যেক বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এখন রোবট বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত। তাদের অনেকেই ভার্চুয়াল এ্যাসিস্ট্যান্ট, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছে। তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন উন্নতমানের সফটওয়্যার, যা এই রোবটিক বিপ্লবেরই পদধ্বনি শোনাচ্ছে। মাইক্রোসফট কর্টানা, গুগল নাউ, এ্যাপল সিরি, এ্যামাজন ইকো ইত্যাদির পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও যোগ হচ্ছে অত্যাধুনিক নানা ফিচার। আইবিএমসহ বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এক্ষেত্রে বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করছে।
অন্য একটি বিষয় হলো মানুষ এ রোবট যুগকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত কি না। গবেষকরা বলছেন, মানুষ এখন আগের যে কোন সময়ের তুলনায় ব্যস্ত হয়ে প্রড়ছে। আর এতেই মানুষের এ রোবটিক যুগের জন্য প্রস্তুত বিষয়টি অনুমান করা যায়। কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে এখন আগের তুলনায় মানুষ পরিবর্তিত হয়েছে। তাই গবেষকরা মনে করছেন মানুষ এখন রোবট বিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। অতীতে যে যন্ত্রপাতিগুলো খুব দামী ছিল, এখন তা কম দামেই পাওয়া যাচ্ছে। আর এ কারণে প্রযুক্তি মানুষের হাতের নাগালে চলে এসেছে। এগুলো এখন অনেকের কাছেই একঘেয়ে বিষয়। এখন সময় হয়েছে নতুন ধরনের প্রযুক্তিপণ্য দিয়ে এ চাহিদা পূরণ করার। আর এ চাহিদাই নিয়ে আসবে নতুন বিপ্লবের।
জার্মানির বোখুম শহরের হাসপাতালে রোবট একজন কর্মী। সার্জন কম্পিউটারে দাঁড়িয়ে রোবট চালাচ্ছেন, রোবট পেশেন্টের শরীরে অপারেশন করছে। রোবট পেশেন্টদের খাবার নিয়ে আসছে, পেশেন্টের জ্বর মাপা হলে, তা লিখে রাখছে। দুই ঘণ্টা ধরে অপারেশন চলছে, সার্জনরা অপারেশন টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে। পেশেন্টের অন্ত্রনালীর ক্যান্সার। করে আরও চার ঘণ্টা অপারেশন চলবে। বেশিও লাগতে পারে। সিস্টার আর ডাক্তাররা ছড়া বোখুমের আউগুস্টা হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে একটি রোবটও আছে। তার নাম দ্য ভিঞ্চি। সে যে কোন মানুষের চেয়ে নিখুঁতভাবে স্কাল্পেল ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারে। চীফ সার্জন বেনো মান রোবটটিকে চালান। তার প্রতিটি নড়াচড়া পেশেন্টের শরীরের ভেতর রোবটের ‘হাতগুলোর’ নড়াচড়ায় পরিবর্তিত হয়, এক মিলিমিটার হেরফের হয় না। এ ছাড়া রোবট ক্লান্তি বলে কিছু জানে না। ড. মান বলেন, ‘অপারেটর সব সময় আমি। রোবট আমার কাজটা সহজ করে দেয়, আমি যা করতে চাই, রোবট তা পেশেন্টের শরীরে নিখুঁতভাবে করে দেয়। আমি যদি রোবট ছাড়া অপারেশন করি, তাহলে সেটা দুই তিন ঘণ্টার বেশি ভালভাবে করা সম্ভব নয়, বুঝতেই পারছেন। তারপর হাত নড়ে যায়, কিংবা হাত কাঁপতে শুরু করে। এখানে সে সব বিপত্তি নেই।’
কিচেনে তখন চরম ব্যস্ততা। প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ মিলের ব্যবস্থা করতে হয়। বিভাগ অনুযায়ী রোবটরা খাবারের ওয়াগনটিকে ঠিক ঠিক জায়গায় পৌঁছে দেয়। হাসপাতালের লম্বা করিডর ধরে খাবার পৌঁছে যায় সঠিক বিভাগে। মানুষের সাহায্য লাগে না। পেশেন্ট বা হাসপাতাল কর্মীরা পথে পড়লেও খাবারের গাড়ি সেটা ঠিকমতো কাটিয়ে যায়, সঠিক রাস্তা বেছে নিয়ে আগে থেকে প্রোগ্রাম করা লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। রোবট পৌঁছালে সিস্টাররা খবর পান যে, এবার পেশেন্টদের খাবার দেয়ার সময় হয়েছে। নার্স কাটিয়া আর্নস শোনালেন, ‘বহু পেশেন্ট এটা দেখে অবাক হয়ে যান। অপেক্ষা করেন, রোবট কখন আসবে অথবা জিজ্ঞেস করেন, খাবারের ট্রেগুলো কখন নিয়ে যাওয়া হবে। যাতে তারা সেটা দেখতে পারেন।’
শীঘ্রই পেশেন্টদের রক্তচাপ বা জ্বর মাপার মতো দৈনন্দিন কাজে রোবটদের সাহায্য নেয়া হবে। সিস্টার টেম্পারেচার মাপবেন, কিন্তু সেটা নথিবদ্ধ করার কাজ করবে রোবট, স্বয়ংক্রিয়ভাবে। কাজেই নার্সের হাতে পেশেন্টদের জন্য আরও বেশি সময় বাঁচবে।
আপনি ঘুরতে বেড়িয়েছেন রাস্তায়। হঠাৎ ভিমরি খেলেন কিছু একটা দেখে। নিজের চোখকেও বিশ্বাস করাতে কষ্ট হচ্ছে। কারণ রাস্তার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দাঁড়িয়ে আছে মানুষের জায়গায় রোবট। আপনি ঠিকমতো গাড়ি চালাচ্ছেন না কি ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করছেন তা কড়া দৃষ্টিতে নজর রাখছে রোবট। ট্রাফিক আইন ভাঙলেই এগিয়ে এসে আপনার গাড়ি থামানোর নির্দেশ দিচ্ছে। কেস দিচ্ছে, নিচ্ছে ফাইনও। কিংবা দুষ্কৃতদের ওপর এবং আইনশৃঙ্খলার ওপর নজর রাখছে রোবট, পুলিশের পোশাকে। আপনার সঙ্গে কোন ঘটনা ঘটেছে কিংবা আপনাকে কেউ মলেস্ট করেছে, আপনি অভিযোগ জানাচ্ছেন, একটি রোবট পুলিশের কাছে। রোবট বটে, তবে রোবট বলা যাবে না। পুলিশের পোশাকে একদম পুলিশ। দেখে একটুও বোঝার জো নেই যে রোবট, মানুষ নয়। আর দুষ্কৃতি বা আইন নিয়ন্ত্রণে নজর রাখার ব্যাপারে জবাব নেই। একেবারে মানুষ পুলিশের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে পারে। ভাবছেন এতক্ষণ ধরে যা পড়ছেন সেটা কোন সিনেমার গল্প। একেবারেই নয়। দুবাইয়ের রাস্তায় এটাই এখন বাস্তব। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে সিনেমার গল্প বা মানুষের অভাব পূরণের ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে দুবাই। দুবাইয়ের রাস্তায় ঘুরলে কোথাও না কোথাও এখন আপনার চোখে পড়বেই এই রোবট পুলিশ।
মানুষের মস্তিষ্কের রহস্য আজও পুরোপুরি জানা যায়নি। সেই মস্তিষ্কের কাজ নকল করার চেষ্টা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা তার জটিল কাঠামো সম্পর্কে আরও জ্ঞান অর্জন করছেন। বিশেষ করে অনুভূতি নকল করা বড় এক চ্যালেঞ্জ। সে নাকি খুশি হতে পারে, লাজুক হতে পারে। রোবটের মধ্যে কি অনুভূতি ও সচেতনতা ভরে দেয়া সম্ভব, সেই স্বপ্ন বাস্তব করতে হলে বিজ্ঞানীদের প্রয়োজন এমন এক কন্ট্রোল সেন্টার, যার ভিত্তি হবে মানুষের মস্তিষ্ক। অসাধারণ এক প্রকল্পের মাধ্যমে মস্তিষ্কের কাজকর্ম বোঝা ও কম্পিউটারে তা নকল করার চেষ্টা চলছে।
দক্ষিণ এশিয়ার মওসুমী আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানতে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা অভিনব এক উদ্যোগ নিয়েছেন। বঙ্গোপসাগরে একটি রোবট ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন তারা, যার মাধ্যমে জানা যাবে কীভাবে সাগরের পরিস্থিতি বৃষ্টির ধরনে প্রভাব ফেলছে। এই প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ১ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার। বিজ্ঞানীরা আগামী এক মাস ধরে বঙ্গোপসাগরে এ পরীক্ষা চালাবেন। সে লক্ষ্যে সাতটি রোবট সমুদ্রে ছাড়বেন তারা। যে রোবটগুলো সমুদ্রগর্ভে যেতে সক্ষম। টর্পেডো আকৃতির রোবটগুলোতে পানির মধ্যে পরিচালনা করা হবে জাহাজ থেকে। তারা সমুদ্রের পানির লবণাক্ততা, তাপমাত্রা আর স্রোতের সঠিক পরিমাপ জানাবে। ভারত সরকারের সহায়তায় ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে এই পরীক্ষা চালাচ্ছে। রোবটগুলো থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বর্ষায় সাগরের পরিস্থিতি ভাল বুঝতে পারবেন বলে আশা করছেন। এ বছর ভারতীয় উপমহাদেশে বর্ষা এসেছেন ৮ জুন, সাধারণত এর এক সপ্তাহ আগেই বৃষ্টি শুরু হাওয়ার কথা। ভারতের মধ্য, পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলে এবার ব্যাপক খরা হওয়ায় ভারত সরকার এ গবেষণার ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহী
রোবটের নাম ‘নাও’। সে নাচতে পারে, বাচ্চাদের পড়াতেও পারে। নাও এখন জার্মানিতে আসা শরণার্থী শিশুদের জার্মান ভাষা শেখাতে ব্যস্ত। ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, সেন্সরে সুসজ্জিত ভাষা শিক্ষক রোবটের দারুণ সময় কাটছে শিশুদের সঙ্গে। জার্মানির বিলেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শরণার্থী শিশুদের ভাষা শেখানোর এক কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছে নাও। প্রায় তিন বছরের এক মানবশিশুর উচ্চতার এই রোবট ছয় বছর আগে চীনের সাংহাই এক্সপোতে হাজির হয়েই তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। যে রোবট মনের মতো রোবট পেলে মহানন্দে নাচতেও পারে তাকে দেখে অবাক কে না হবে, বলুন। বিলেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে নাওয়ের দায়িত্ব শরণার্থী শিশুদের জার্মান শেখানো। তার মেমরিতে অনেক জার্মান শব্দ, ব্যাকরণের অনেক নিয়ম এবং ব্যাখ্যা আগেই ঢুকিয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ফলে বাচ্চাদের জার্মান পড়াতে তেমন কোন অসুবিধা হচ্ছে না। শ্রেণীকক্ষে ঝানু শিক্ষকের মতো নানা প্রশ্ন করছে নাও। উত্তর ভুল হলে সঙ্গে সঙ্গেই বলে উঠছে, ‘নাইন, নাইন, ডাস ইস্ট ফালশ।’ সঠিক উত্তরটা জানিয়ে দিতেও ভুল হচ্ছে না তার। সমস্যা শুধু এক জায়গায়। শিশুদের আবেগ-অনুভূতি বুঝে রোবট কিভাবে পড়াবে, শিশুদের অনুভূতি না বুঝলে তাদের মনে ভাষা শেখার আগ্রহ বাড়াবে কী করে রোবট, নাওকে নিয়ে এখন এটাই একমাত্র দুশ্চিন্তা।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: