বৃহস্পতিবার, ২৬ মার্চ, ২০২০

করোনায় পাশে এসে দাড়ালো ছাত্ররা

মানুষের প্রয়োজনে মানুষ—এটাই তো আমাদের শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। জাতির এই দুঃসময়ে সরকার ও প্রশাসনের পাশাপাশি ফয়েজ আহমদের মতো সচেতন ছাত্ররা এগিয়ে আসবেন, নিজের গ্রামকে সুরক্ষার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন, এটাই তো কাম্য। এমন ছোট ছোট সচেতনতা একত্রে আমরা রুখে দেব যেকোনো জরাব্যাধি।


করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আপাতত বন্ধ রয়েছে। আর তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে যার বাড়ি কিংবা গ্রামে চলে গেছেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন গ্রামের মানুষ করোনাভাইরাস সম্পর্কে খুব বেশি সচেতন নয়। এই মর্মপীড়া থেকে অনেক শিক্ষার্থীই গ্রামের মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন সচেতনতা মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়েজ আহমেদ একজন সচেতন নাগরিক। গ্রামের বাড়ি সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার বাংলাবাজার গ্রামে। 

ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পাহাড় ঘেঁষে এ গ্রামে বসবাস করেন সহজ–সরল গ্রামের মানুষ। কিন্তু অধিকাংশ গ্রামবাসী মহামারি করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন নন। অনেকে আবার কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন এবং ন্যূনতম সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও সামাজিক দূরত্ব কী, সে বিষয়েও অবগত নয়। অথচ করোনা নামক এই মহামারি থেকে রক্ষায় এখন পর্যন্ত কার্যকর উপায় নিয়মিত সাবন দিয়ে হাত ধোয়া ও জনসমাগম এড়িয়ে চলা। নিজের গ্রামের মানুষকে এতটা অসচেতন দেখে ঘরে বসে থাকতে পারেননি ফয়েজ আহমেদ, শুরু করে দেন সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম। প্রথমেই আঞ্চলিক ভাষায় মাইকিং করে গ্রামের মানুষকে সচেতন করেন প্যান্ডেমিক করোনাভাইরাস কীভাবে ছড়ায় ও কীভাবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করা যা। 

গ্রামের অনেকেই কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন ও সোশ্যাল ডিসট্যান্সের মতো শব্দগুলোর সঙ্গে পরিচিত নয় আর এ জন্যই তাদের মধ্যে সচেতনতারও ঘাটতি ছিল ফয়েজ ঠিক এ শব্দগুলোই গ্রামের গুটিকয়েক সচেতন মানুষের নিয়ে প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে সাবলীল ভাষায় বুঝিয়ে দেন। ফয়েজের সচেতনতার মাইক নিজ গ্রামেই সীমাবদ্ধ নয়, আশপাশের আরও ৬টি গ্রামে পৌঁছে দেয় সচেতনতার বার্তা। অন্যান্য গ্রামের শিক্ষিত সমাজেও ফয়েজকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজ নিজ গ্রামে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সচেতন হলেও ফয়েজ আহমদ লক্ষ করেন, গ্রামে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক সহজলভ্য নয়। 

এ জন্য মহামারি করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করেই ক্ষান্ত হননি, নিজেদের উদ্যোগে গ্রামের মানুষের সহায়তায় প্রায় এক হাজার হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরণ করেন। এই হ্যান্ড স্যানিটাইজারগুলো আইইডিসিআরের ফর্মুলা অনুযায়ী নিজেরাই তৈরি করেন। গ্রামের প্রতিটি মানুষের কাছে এসব সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা কয়জন করতে পারে। স্থানীয় গণপরিবহনে জীবাণুনাশক স্প্রে করাও ছিল কার্যক্রমের অংশ। 

ফয়েজদের প্রচেষ্টায় জৈন্তাপুর উপজেলার ৪ নং বাংলাবাজার গ্রামের মানুষ এখন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতন তারা এখন জানে কীভাবে এই মহামারি থেকে নিজেদের রক্ষা করা যায়।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: